খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ আষাঢ়, ১৪৩১ | ৪ জুলাই, ২০২৪

Breaking News

  পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সাথে ওবায়দুল কাদেরের বৈঠক স্থগিত
  সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায় আপাতত বহাল
  রংপুরে মিঠাপুকুরে সেপটিক ট্যাংকে পড়ে ৩ জনের মৃত্যু
বলছে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ

ইমরান খানের গ্রেপ্তার বিধিবহির্ভূত, আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বিধিবহির্ভূত ভাবে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের একটি মানবাধিকার সংস্থার ওয়ার্কিং গ্রুপ। একইসঙ্গে বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটারের গ্রেপ্তারকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এছাড়া ইমরানকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে নির্বিচারে কারারুদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের একটি মানবাধিকার সংস্থার ওয়ার্কিং গ্রুপ।

সোমবার জারি করা এক মতামতে জেনেভা-ভিত্তিক ইউএন ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিট্রারি ডিটেনশন বলেছে, ‘(এই অবিচারের) উপযুক্ত প্রতিকার হবে ইমরান খানকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে তাকে ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য বিষয়াদির পাশাপাশি একটি কার্যকর অধিকার প্রদান করা।’

আল জাজিরা বলছে, জাতিসংঘের এই ওয়ার্কিং গ্রুপ চলতি বছরের ২৫ মার্চ এই মতামত প্রকাশ করে। তবে এটি জনসমক্ষে আসে গতকাল সোমবার। জাতিসংঘের এই ওয়ার্কিং গ্রুপ তাদের মতামতে বলেছে, ‘ইমরান খানকে আটকের কোনও আইনি ভিত্তি ছিল না এবং মনে হচ্ছে রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করার উদ্দেশ্যে আটক করা হয়েছিল বলে (ওয়ার্কিং গ্রুপ) সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। সুতরাং, শুরু থেকেই, সেই প্রসিকিউশনটি আইনের ভিত্তিতে ছিল না এবং কথিত একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এটি করা হয়েছে।’

পাঁচজন স্বাধীন বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত জাতিসংঘের এই ওয়ার্কিং গ্রুপের মতামত শোনা বাধ্যতামূলক নয়। তবে তাদের এই মতামত বেশ গুরুত্ব বহন করে। ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, ইমরান খানকে যে আইনি সমস্যার মধ্যে ফেলা হয়েছে সেটি মূলত তার এবং তার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির বিরুদ্ধে ‘অনেক বৃহত্তর দমন অভিযানের’ অংশ।

এতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে ইমরান খানের দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হয়েছিল এবং তাদের নির্বাচনী সমাবেশগুলোকেও বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল। এছাড়া ‘নির্বাচনের দিনে ব্যাপক জালিয়াতি ও (কারচুপির মাধ্যমে) কয়েক ডজন সংসদীয় আসন চুরি’ করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছে জাতিসংঘের এই ওয়ার্কিং গ্রুপ।

অবশ্য পাকিস্তান সরকার এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি। তবে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর এই দেশটির নির্বাচন কমিশন গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে কোনও ধরনের কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এর আগে গত বুধবার মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হওয়া সাধারণ নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে একটি প্রস্তাব পাস করে। এর কয়েক ঘণ্টা পরই যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘হস্তক্ষেপ’ করার চেষ্টা করার অভিযোগ করে পাকিস্তান।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবটিতে পাকিস্তানের নির্বাচনে কথিত অনিয়মের বিষয়ে ‘পূর্ণাঙ্গ ও স্বাধীন’ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টিও নির্বাচনে তাদের জয়কে নস্যাৎ করার জন্য কারচুপি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে।

‘পাকিস্তানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ’ শিরোনামে এই প্রস্তাবটি গত ২৫ জুন কংগ্রেসে পেশ করা হয়েছিল। এই প্রস্তাবে ‘গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমুন্নত রাখতে’ এবং পাকিস্তানি জনগণের ‘মানবিক, নাগরিক বা রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘনের যেকোনও প্রচেষ্টার নিন্দা করার জন্য’ পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।’

প্রস্তাবটি কংগ্রেসের ৩৬৮ সদস্যের অপ্রতিরোধ্য সমর্থনে পাস হয় এবং এর বিপক্ষে মাত্র সাতটি ভোট পড়ে।

ইমরান খানের দল পিটিআই মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে পাস হওয়া এই প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানায়। দলটি দাবি করে থাকে, গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে জয়ী হওয়া সত্ত্বেও তাদের ম্যান্ডেট চুরি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন মাস পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে ইমরানের দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘ব্যাট’ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা ৯৩টি আসন জয়লাভ করে, যা অন্য যেকোনও দলের চেয়ে বেশি।

তবুও এই ফলাফল সংখ্যাগরিষ্ঠতার মানদণ্ডে কম ছিল এবং পিটিআই দাবি করে, তাদের ম্যান্ডেট চুরি করা হয়েছে।

অন্যদিকে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) যথাক্রমে ৭৫ এবং ৫৪টি আসনে জয়লাভ করে। সরকার গঠনের জন্য তারা অন্য আরও ছোট দলগুলোর সাথে পরে জোট গঠন করে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!